রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

ভালুকায় গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণ, আটক ১

আবুল বাশার শেখ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:: ময়মনসিংহের ভালুকায় দিন-দুপুরে এক গার্মেন্টস কর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই গার্মেন্টস কর্মী বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা (নং-৭ তাং ০৬/০৭/২০২৩) দায়ের করেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বেলা আনুমানিক ২টার দিকে উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন হবিরবাড়ী এলাকার বনবিভাগের হবিরবাড়ি বিট অফিস সংলগ্ন গহীন বনাঞ্চলে। এ ঘটনার সাথে জড়িত উপজেলার দক্ষিন হবিরবাড়ি এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে আল আমীন (৩৭)কে গ্রেফতার করেছে ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।

স্থানীয় ও মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার মহনগঞ্জ উপজেলার ধর্ষণের শিকার ওই গার্মেন্টস কর্মী তার মা-বাবাসহ দীর্ঘদিন যাবৎ হবিরবাড়ির সাদ-সান মোড় এলাকার বাতেন সরকারের বাড়ীতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে। বুধবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়ি থেকে চাকুরীর সন্ধানে আসা ১৩ বছরের এক মামাতো বোন ও একই বয়সের এক খালাতো ভাইকে সাথে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ওই গহীন বনাঞ্চল এলাকার মাঝখানের পায়ে হেটে চলার রাস্তা দিয়ে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দুরত্বের একটি পার্কে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই স্থানীয় ৪ যুবক তাদের আটকিয়ে তিনজনের হাত-পা বেঁধে ফেলে। সাথে থাকা মামাতো বোন ও খালাতো ভাইকে ৪ যুবকের দুইজন ছুরির ভয় দেখিয়ে আটকে রাখে। বাকী ২ যুবক ওই গার্মেন্টস কর্মীকে জোরপূর্বক কিছু দুরে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আলামিন তাকে ধর্ষণ শুরু করে। এ সময় স্থানীয় এক মহিলা বনে লাকড়ি কুড়াতে এসে ঘটনাটি টের পেয়ে, দৌঁড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কিছু দূরত্বে এক কৃষক কলের লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করতে দেখে বিষয়টি তাকে অবহিত করেন। ওই কৃষক পার্শ্ববতী অপর কৃষককে তার বাড়ি থেকে ডেকে এনে ঘটনাটি তাকে জানালে, তিন কৃষক মিলে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মামাতো বোন ও খালাতো ভাইকে যে দুইজন ছুরির সাহায্যে আটকিয়ে রাখার দায়িত্বে ছিলো, তারা দৌঁড়ে পালিয়ে গেলে, তাদের উদ্ধার করেন এবং তাদের দেয়া তথ্যে, তিন কৃষক ধর্ষণের স্থানের দিকে অগ্রসর হলে, এক যুবকের সাহায্যে অপর যুবক ধর্ষণরত অবস্থা থেকে তারাও দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় বিবস্ত্র ও প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে দুই মহিলার সাহায্যে ওই গার্মেন্টকর্মীকে মজনু মিয়া নামের স্থানীয় এক কৃষকের বাড়ী নিয়ে আসেন। ওই গার্মেন্টকর্মী কিছুটা সুস্থ্ হলে, মজনু মিয়া প্রথমে থানায় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ৯৯৯ এ কল করে ভালুকা মডেল থানার সাথে যুক্ত হয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। এ সময় আল আমীন নামের এক ধর্ষক মজনু মিয়াকে ডেকে নিয়ে এ ঘটনা ধামাচাপার জন্য টাকার প্রস্তাব দেয়। মজনু মিয়া বুঝতে পেরে উপস্থিত লোকজনের সহযোগিতায় আল আমীনকে আটক করে ধর্ষিতাসহ পুলিশে সোপর্দ করেন।

ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মীকে উদ্ধারকারী স্থানীয় কৃষক মজনু মিয়া জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা তিন কৃষক দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে, প্রথমে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ধর্ষিতার দুই ভাই-বোনকে উদ্ধার করার পর, তাদের সাথে নিয়ে ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মীকে বিবস্ত্র ও প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে মহিলাদের সাহায্যে তাকে আমার বাড়ীতে এনে ৯৯৯ এ কল করার অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ আসলে, ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মী, তার দুই ভাই-বোন ও আটককৃত ধর্ষক আল আমীনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।

ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মীকে উদ্ধারকারী ভালুকা মডেল থানার এস আই মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, উদ্ধারের সময় ধর্ষণের শিকার গার্মেন্টকর্মী আতংকিত ও কিছুটা অসুস্থ্য ছিল। গ্রেফতারকৃত ধর্ষক আল আমীনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ভালুকা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করি, আর ঘটনা স্থল থেকে আল আমিন নামের একজনকে গ্রেফতার করি, অন্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে। ভিকটিমকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com